Sunday, February 23, 2014

বিডিআর বিদ্রোহ ও কিছু কথা।

আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া/ করিতে পারিনি চিৎকার/ বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার/ বিধাতা তোমারে ডাকি বারেবারে/ কর তুমি মোরে মার্জনা/ দুঃখ সইতে দাও গো শক্তি/ তোমারি সকাশে প্রার্থনা/ চাহিনা সহিতে আমার মাটিতে মজলুমেরই আর্তনাদ/ বিষাদ অনলে পুড়ে বারেবারে/ লুণ্ঠিত হবে স্বপ্নসাধ। 

বিডিআর বিদ্রোহ! ৫৭ জন সেনা অফিসার মারা গেল, প্রায় ৪ হাজার বিডিআর জওয়ানের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হল। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর "মনোবল" ভেঙ্গে গেল, সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী গুলোর মধ্যে চিরস্থায়ী শত্রুতা তৈরী হল, তা প্রকাশ্যে হোক কিংবা অপ্রকাশ্যে। 

আসলে, ক্ষতিটা হলো কার?? লাভটাই বা কার?? 

ক্ষতিটা হলো আমাদের আর লাভটা হলো তাদের যারা চায় এদেশে সামরিক বাহিনী নামে কিছু না থাকুক। ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যার আসল ঘটনা কী আমরা জানি?? কিংবা আমাদের জানতে দেয়া হয়েছে?? উত্তর-না। বিডিয়ার এবং সেনা অফিসারদের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে বিডিয়ার জওয়ানরা এত বড় কান্ড ঘটাবে, এটা ভাবা বোকামি। তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে 'উস্কানি' দেয়া হয়েছে এবং শেল্টার দেয়া হয়েছে। মূল উস্কানি দাতা সম্ভবত দেশের বাইরের, যারা পার্বত্য অঞ্ছলকে 'উস্কানি' দিচ্ছে, সেই এজেন্সিই এখানে সক্রিয়। সরকার বিডিয়ার জওয়ান দের 'সাধারণ ক্ষমা' ঘোষনা করল। আবার তাদের বিচার করল!! এবং পরে বলল, যারা হত্যার সাথে জড়িত তারা এই সাধারণ ক্ষমার বাইরে। বিচার হল প্রায় ৫ হাজার বিডিয়ারের, ঐ দিন পিলখানায় ছিল সম্ভবত ৩ হাজার বিডিয়ার। তাহলে সাধারণ ক্ষমার সংখ্যাটা কই?? আমাদের দেশের স্বাধীনতার পরে যতবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে, ততবারই তা পরে ভঙ্গ করা হয়েছে, পরবর্তীতে যদি আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে 'সাধারণ ক্ষমা' নামের অস্ত্রটি হয়তোবা কাজে দিবেনা। 

বিডিয়ার সদস্যরা আসলে ঘটনার 'বলি'!! তাদের উস্কানি দেয়া হয়েছে, এবং ঘটনা সমাপ্তির পর তাদের উপর থেকে শেল্টার তুলে নেয়া হয়েছে। আমি এই রকম কয়েকজনকেই জানি, যারা ঘটনার সাথে জড়িত না থাকার পরও শাস্তি ভোগ করছে। আসলে দরকার ছিল, শক্তিশালী 'বিডিয়ার' কে ধ্বংস করে দেয়া। এবং দেয়া হয়েছে। আর এখন বিডিয়ার তো সীমান্ত পাহারা দেয়ার ছেয়ে সীমান্তের মধ্যের মানুষ পাহারা দিতেই ব্যস্ত। 

বিডিয়ার বিদ্রোহের জন্য অনেকগুলো তদন্ত কমিটি ঘটন করা হলো। বিশ্বের অন্য দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ঘটনা উদঘাটনের জন্য, আর আমাদের দেশে ঘটনা 'ধামা-চাপা' দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সব তদন্ত কমিটির প্রথম কথা হল, "তথ্য অনুসন্ধান চলছে", মাঝের কথা, "তদন্তের কাজ দ্রুত এগুচ্ছে", এবং সবাই যখন এসব ঘটনা ভূলে যাবে কিংবা পত্র পত্রিকার হেড লাইন চেঞ্জ হয়ে যাবে, তখন তদন্ত কমিটির আবির্ভাব হবে এবং তারা 'নিরীহ' কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের মাধ্যমে ঘটনার 'ইতি' টানবে এবং নিরেপেক্ষ তদন্তের টাইটেল লাগানো হবে।